বিধান বিশ্বাস
পৃথিবীর খাদ্যশষ্য হিসেবে মানুষ যা যা গ্রহণ করে ধান তার মধ্যে বহুল ব্যবহৃত। অর্ধেকের অনেক বেশী লোক খাদ্য হিসেবে ধান তথা চাল ব্যবহার করে। এশিয়ার পূর্ব দেশ গুলো ধান উৎপাদনে অগ্রণী। তার মধ্যে সমগ্র বাংলার প্রথম শষ্যই হলো ধান। বাংলার ধান উৎপাদনের কথা প্রাচীন ও মধ্য যুগের সাহিত্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাঙালির যা কিছু সংস্কৃতি (Culture) তা সবই প্রায় এই ধান কেন্দ্রিক সভ্যতায় গড়ে উঠেছে। সারা বছরের মাত্র চার মাস বাকী থাকে আর আট মাস জুড়ে ধানের চাষ নিয়েই বাংলার কৃষক ব্যস্ত থাকে। এখন অবশ্য সেই চার মাসেও বোরো বা খরার ধান চাষে ভীষণ ভাবে জড়িত হয়েছে কৃষককুল। কেননা জলের জোগান থাকলে মাঘ ফাল্গুনে রোয়া ধান চৈত্র বৈশাখে উঠে যায় নিরুপদ্রপে। এই প্রথাটি নতুন, এতে করে অনেক প্রচলিত নিয়ম-কানুন, মেলা মহোৎসবের আমূল পরিবর্তণ ঘটে গেছে। তবুও আজ বাঙালির জীবনে যাকিছু অনুষ্ঠান তা নির্ভর ক’রে থাকে ধান সহযোগে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে। অর্থনীতির অনেকটাই ধান উৎপাদন কেন্দ্রিক।
সারা বাংলার ধান চাষকে কেন্দ্র করে বেশকিছু লোক উৎসব পালিত হয়। এই উৎসবের শুরুটা হয় জ্যৈষ্ঠ মাসের রোহিনীর দিন থেকে। এটি পশ্চিম সীমান্ত বাংলার উৎসব। ওই দিন প্রথম বীজতলায় বীজধান ছড়িয়ে পরীক্ষা করা হয় কতদিনে কেমন চারা তৈরী হয়। এগুলো দেখে মূল ধান বোনার কাজ শুরু হয়। বিশেষ নিয়মে তৈরী তালগাছের ডেগোর বাতায় নতুন তৈরী ডোলা, তাতে বীজধান ভরে নিয়ে যাওয়া হয়, তার আগে ডোলার গায়ে পিটুলির গোলার ছোপ দেয়া হয়। ঘরের যেখানে ডোলা রাখা হয় সেখানেও আলপনা দেওয়া হয় মেঝে লেপে। ধূপ দীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়। তারপর প্রকাশকারী শুদ্ধ বস্ত্র বা নতুন বস্ত্র পরে ডোলা নিয়ে মাঠে যায়। যাবার সময় সে পিছন ফিরে তাকাবে না। প্রথম বীজ বোনার পর যতদিন ধানের চারা না গজাবে অর্থাৎ বের না হবে, ততদিন আর কোন বীজতলা বা বপনকার্য হবে না। প্রকৃতির খেয়ালকে এভাবেই পরখ করে চাষিরা।
বাঙালির কাছে ধান যে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা তার অচরণ আর আচার দেখলে বোঝা যায়। বোঝা যায় আদর করে ধানের নামকরণ দেখে। কোন শষ্যকে যে এতো নামে ডাকা হয় তা বাংলার ধান ছাড়া আর কিছুতে আছে কিনা সন্দেহ। আর কোন শষ্য থেকে এত রকমের উপকরণ হতে পারে তাও অজানা।
“… যেহেতু ধান লক্ষী, গৃহস্থের কল্যাণকারী তাই তাকে নিয়ে প্রকৃতি বিজ্ঞান সম্মত প্রবাদ-প্রবচণের অন্ত নেই। এর পাশাপাশি চলতো লোকায়ত জীবন থেকে উদ্ভুত ছড়া-গান-লোককথা, ব্রত, আলপনা ও ধান মাড়াইয়ের শেষে করাইতে তোলার পর উৎসব।…” -(ভূমিকা- বাংলার ধান ও ধান সংস্কৃতি, সম্পাদক- লীলা চাকী)।
এরকম ব্যপকত্ব আর কোন খাদ্য-শষ্য নিয়ে আছে কি? ধান থেকে উৎপাদিত আতপ চাল, তা গুড়ি ক’রে জলে গুলে ভূমিপরে হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে যে চিত্র রচনা করা হয় তা আলপনা। শিলাচিত্রের পর বোধ হয় চিত্র রচনার এটি দ্বিতীয় প্রথা। কেননা মাঝামাঝি আর কোন চিত্রের হদিস পাওয়া যায়নি। আর গুহাচিত্রের ক্ষেত্রে যেমন রেখা ভিত্তিক ছবি আলপনাও তাই।
কৃষি যেমন মানুষের অত্যাশ্চর্য্য আবিস্কার, শিকার জীবন ছেড়ে কৃষি জীবনে প্রবেশের পরই সভ্যতার উন্মেষ ঘটে। কৃষি শষ্য ধান থেকে চাল হয়ে আলপনার আবির্ভাব তাও কম আশ্চর্যের নয়। সেই আলপনা ব্রত বা ধান সংক্রান্ত আচারের সঙ্গী হয়ে যেন জন্মদাত্রীর ঋণ পরিশোধ করছে। যেন গায়ে গায়ে শোধ। আচারের এ রীতিও অভিনব। জ্যৈষ্ঠের বীজ বপণ থেকে অগ্রহায়ণের গোলাজাত করা অবধি নানা অনুষ্ঠান চলতে থাকে। আলপনার এই বিস্ময়কর জগত থেকে শুধুমাত্র ধান কেন্দ্রিক ব্রত, পালা, আচারের নমুনা তুলে ধরা হ’ল। এগুলো সমগ্র বাংলার আচরিত রীতি নীতি থেকে নেওয়া। সব জায়গাতেই রকম ফেরে অনুষ্ঠান গুলো হয়ে থাকে।
ব্রত পার্বণের ভ‚মন্ডলে সারা বছরে প্রধান একটি বিষয় হল চাষ-বাস সংক্রান্ত আচার আর তার আলপনা । বাংলার কৃষির মূল শস্য হল ধান, তাই তাকে জড়িয়ে বেশ কিছু ব্রত পার্বণের সার্থক উপস্থাপনা ঘটে । এখানে দেখা যাবে বীজ ধান সংগ্রহ থেকে চাষের শেষ পর্যায়ে ধান কেটে গোলায় তোলা পর্যন্ত পর্বে পর্বে আলপনার সমাহার । আলপনাও দেওয়া হয় গুড়ি জলে গুলে পিটুলি তৈরি করে ।
১.
চাষির ঘরে বীজধান থাকে মাটির কলসিতে । ঘরের কোণে মাটির বেদির ওপর রাখা হয় কলসি। বেদির চারধার দিয়ে আলপনা দেওয়া হয়, আবার কলসির গায়েও চালের গুড়িতে ন্যাকড়া ডুবিয়ে ছোপ ছোপ করে আলপনা দেওয়া হয় । বীজধানের ভান্ডে লক্ষী বসত, সারা বছর তাকে যতনে রাখতে হয়। কোথাও কোথাও প্রতি বৃহস্পতিবার কলসির চারধারে গোল করে আলপনা দেওয়ার চল আছে। কলসির গায়ে ছোটো থেকে বড়ো করে গোল দাগ দেওয়া হয়, তাতে চালের গোলা গড়িয়ে পড়ে এক অন্য মাত্রা যোগ হয় আলপনায়। এই আলপনাটি সংগ্রহ করা হয়েছে নদিয়ার বগুলা থেকে।
২.
পুণ্যপুকুর হল গ্রামজীবনের জল-স¤পদের আশ্রয় । এটি মূলত পানীয় জলের প্রতীক। পুকুর শুকিয়ে গেলে জীবন অচল হয়। চাষের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। খরা যাতে না হয় সেই কারণে বৈশাখ মাস জুড়ে গ্রামে চাষি পরিবারের মেয়ে-বউরা বৃষ্টির কামনায় পুণ্যিপুকুর ব্রত পালন করে। সেই উপলক্ষ্যে নানা সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে আলপনা আঁকা হয়। পুকুর কেটে তার চারধারে আলপনা দেওয়া হয়। এই আলপনাটিতে পুকুরের চারধারে বাঁধানো ঘাট, আর মাঝে আঁকা পদ্মবন। এই আলপনাটি সংগ্রহ করা হয়েছে নদিয়া জেলার শিমুলতলার বাসন্তী দেবীর কাছ থেকে।
৩.
ধানগাছের গর্ভাবস্থায় সাধ দেওয়া হয়। ধানের সুস্থতা কামনায় ওষুধপালা করা হয় নলপুতা (নলপুতা হল নানারকম ঔষধি গাছ কচুপাতায় মুড়ে নলখাগাড়ার মাথায় বেঁধে ধানের খেতে পুঁতে দেওয়া হয়) সংক্রান্তিতে অর্থাৎ আশ্বিন সংক্রান্তিতে । কোথাও এটি গারসি নামেও পরিচিত। এই ঔষধি গাছের আলপনাটি নদিয়া জেলার নিরঞ্জনপুর থেকে সংগ্রহ করা।
৪.
কোজাগরী পূর্ণিমাতে চাষির বাড়িতে ঘটা করে ল²ীপুজো হয়, ওই দিন তার বাড়িতে পুজোর আয়োজন তো থাকেই তার সঙ্গে সারা ঘরদোর লক্ষীর আসন আর উঠোন জুড়ে চলতে থাকে আলপনার ঢেউ। কত রকম লতাপাতা আর ফুলের ঠাটে ভরিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে লক্ষীর চরণ ও ধানছড়া গৃহস্থ আঁকবেই। এটি সবচেয়ে শুভচিহ্ন লক্ষীর আগমন ঘোষণায়। বাংলার প্রায় সব অঞ্চলেই এই ঠাটটি প্রচলিত। এখানে তারই নমুনা।
৫.
খেতের ফসল পেকে উঠলে তাকে কেটে ঘরে আনা মানে লক্ষী আনা। চাষি কার্তিক মাসে নির্দিষ্ট দিনে শুদ্ধ কাপড় পরে ধূপ-দীপ-কাস্তে-বস্ত্রখন্ড বা নতুন গামছা নিয়ে মাঠে যায়। জমির এক কোণে ধূপ-দীপ জ্বেলে ধানগাছের গায়ে সিঁদুরের ফোটা দিয়ে প্রণাম করে। পরে কাস্তে দিয়ে আড়াই মুঠ ধান কেটে কাপড়ে বা গামছায় জড়িয়ে মাথায় করে বাড়ি নিয়ে আসে। একে বলে মুঠ আনা। চাষি বাড়িতে এলে গৃহিনী তার পা ধুইয়ে দেন। এই সময় গোরুর গাড়িতে আলপনা দেওয়া হয়। যেহেতু এই গাড়ি বোঝাই হয়েই ধান আসবে বাড়িতে। এই আলপনা সদর থেকে বাড়ির ভিতরে যেখানে ধানের মুঠটি রাখা হবে সেখানে পর্যন্ত দিতে হয়। এই আলপনা দেওয়া হয় বীরভ‚ম জেলার পালশবনি গ্রামে ও অন্যান্য জায়গায়।
৬.
খেতের ধান কেটে এনে কিছুদিন রাখা হয় খামারে। খামার লক্ষীর স্থান। চাষি খামারে উঠলেই আগে প্রণাম করে। যতদিন ধান খামারে থাকে ততদিন চাষিবউ রোজ না হলেও প্রতি বৃহস্পতিবার খামারের সামনে আলপনা দেবেই। নানারকম আলপনা, তাতে পদ্মফুল ও লক্ষীর শ্রীপদ-চিহ্ন একটি বিশেষ বিষয়। আর সব হয় সাংকেতিক চিহ্নের মতো। পশ্চিম মেদিনীপুরের সরডিহা গ্রামে এই আলপনা দেখা যায়। অবশ্য ঝড়খন্ডের মাহাতো স¤প্রদায়ের মধ্যেও এই আলপনা দেখা যায় ।
৭.
খেতের ধান খামারের মলন বা মাড়াই করার আগে খামারপুজো করা হয়। তাতে খামারকাজের সরঞ্জাম এঁকে পুজো করা হয়। মেহীখুটি, তাতে বাধা আড়াই মুঠ ধানের গুছি, গোরু বাঁধার দাওনদড়ি, গোরু, ধামাকুলো ইত্যাদির পাশে আর মলনের ধার বরাবর রেখা আঁকা হয়। এই আলপনাটি সংগ্রহ করা হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শিলদা থেকে।
৮.
শষ্যপাত্র: কুটি – কোলা – ডোলা। প্রথমটি কাঁচা মাটির, দ্বিতীয়টি পোড়া মাটির বড় কলসীর আকারে, তৃতীয়টি বাঁশের বাতার মিহি বুননে তৈরী। এতে চাল রাখা হয়। বেশী পরিমান চাল তৈরী করে বা সংগ্রহ করে এগুলিতে সংরক্ষিত করা হয়। কোন কোন সময়ে সম্বৎসরের খাদ্য শষ্যও সংরক্ষিত থাকে। এগুলির গায়ে গোলা নেতা দিয়ে ছোপ ছোপ করে অথবা নানা রকম আলপনা দেওয়া হয়। কুটি বা কোলার ঢাকনা হিসেবে সরা ব্যবহার করা হয়। সরাতেও আলপনা দেওয়া হয়। উপমহাদেশে মেহেরগড়ে আবিস্কৃত সরা আনুমানিক ৭০০০ বছর আগেকার, তার উপর মনক্রম রঙে শিলাচিত্র ঢঙে ছবি আঁকা হয়েছে। এভাবেই হয়তো একদিন শরতের লক্ষী চিত্রর আবির্ভাব ঘটেছে। এ তথ্য হাওড়ার বাগমান বাসিন্দা সূর্যেন্দু শেখর বিশ্বাসের লেখাতে পাওয়া।
৯.
ধান থেকে চাল আর চালকে প্রথম ব্যবহারের দিন হয় নবান্ন অনুষ্ঠান। নবান্ন না করে চাষি নতুন ধানের ভাত খাবে না। অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিন তাই নবান্নের দিন। অবশ্য অন্যান্য দিনেও নবান্ন হতে পারে, তবে তিথি মেনে করতে হয়। গৃহস্থ ধানের প্রথম ভাগ ঢেকিতে কুটে চাল বের করে সেই চাল গুড়ি করে পায়েস করে লক্ষীর আসনের সামনে দেয়, আবার গুড়ি দিয়ে আলপনাও দেয়। বাড়ির সদর দরজা থেকে লক্ষীর আসন পর্যন্ত আলপনা দেওয়া হয়। নবান্নের প্রসাদ যেখানে রাখা হয় সেখানে আগে আলপনা দেওয়া হয়, তার ওপরে বসার আসন ও নৈবেদ্যর থালা রাখা হয়। এই নিয়ম মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরে দেখেছি। সঙ্গের আলপনাটি তারই নমুনা।
১০.
বার লক্ষী বা উঠান লক্ষী ব্রত। ১লা মাঘ এই অনুষ্ঠান হয়। সকালে উঠান গোবর গোলা দিয়ে লেপে তার উপর এলা মাটি দিয়ে পোচ দেয়া হয় যাতে আলপনা সুন্দর করে দেওয়া যায়। লেপা শুকালে ব্রতী স্নান করে শুদ্ধ কাপড়ে বড় গোল ক’রে আলপনা দেয়, পাশদিয়ে কৃষি সরঞ্জাম আর ব্যবহারিক দ্রব্যর আলপনা দেয়। গোলের মাঝখানে ধামা ভরে ধান এনে ফেলে দেওয়া হয়। দূর থেকে লক্ষীর পা এঁকে দেয় ধানের দিকে মুখ করে। এই লক্ষীর পা দেওয়ার পদ্ধতি অভিনব- হাতের মুঠোর নিচের দিক পিটুলি গোলায় চুবিয়ে ছাপ দেয়া হয়, শেষে আঙ্গুলের সাহায্যে ফোটা দিয়ে পায়ের পাতার আঙ্গুলের ছাপ একটু দেওয়া হয়। এই রকম উদ্ভাবনী ক্ষমতার ধারক কিন্তু মেয়েরাই।
১১.
ধানের গোলা হল লক্ষীগোলা। সংবৎসরের ধান জমা থাকে গোলায়। চাষির বড় ভরসা। যে যত সম্পন্ন চাষি তার তত বড়ো গোলা। আলপনায় গোলা আঁকার পদ্ধতিটি খুব চমৎকার। বিন্দু দিয়ে শুরু করে গোলের আকৃতি ক্রমশ বাড়তে থাকে। তারপর সামনে মইয়ের মতো একটা সিঁড়ি করে। বড়ো গোলা বাঝোতে বড়ো সিঁড়িটির পাশে দুটি ছোটো সিঁড়ি আঁকা হয়; তার ওপরে দুটি গোল গোলা আঁকে। এই আলপনা দেখতে ফুলগাছের মতো। যেন গাছের ডগায় ফুটন্ত ফুল। সারা বছর গোলার সামনে ন্যাতা লেপে আলপনা দেওয়া হয়। তাতে ধানের শিষের চিহ্ন থাকবেই। নদিয়ার নিরঞ্জনপুর থেকে সংগ্রহ করা এই আলপনা।
১২.
লক্ষীব্রতের চালি বা অন্যান্য জায়গায় আলপনাতে প্যাঁচা আঁকা হয়। প্রধান ক্ষেত্র হল ধানের গোলা। নদিয়া, বর্ধমান, বীরভ‚ম জেলার ধানের গোলার গায়ে মাটি লেপে চৌকোনা ক্ষেত্র লেপা হয়। লক্ষীপূজোর সময় তার ওপরে আলপনা আঁকা হয়। তাতে বিশেষ করে প্যাঁচা থাকে। একেক ক্ষেত্রে অঙ্কনক্ষমতা বিশেষে প্যাঁচার গড়ন আলাদা হয়। ডানা উঁচু উড়ন্ত প্যাঁচা শুভচিহ্ন, তাই আলপনায় সেটিই বেশি চোখে পড়ে। লক্ষীর আসনের প্যাঁচা স্থির, উড়ন্ত নয়।
১৩.
কৃষিজীবনের সমাপ্তি-উৎসব হল পৌষপার্বণ। এই সময় গ্রামের প্রতিটি ঘরে ধামা ভরে যায় চালের গুড়িতে। সেই গুড়ি থেকে পিঠে পুলি পায়েস তো হয়ই, আলপনার জন্য রাখা হয় গুড়ি। বাড়ির উঠোন জুড়ে দেওয়া হয় আলপনা। এই আলপনায় আঁকা হয় কৃষির সরঞ্জাম। চাষবাসের যত সরঞ্জাম আছে- লাঙল, নিড়ানি, জোয়াল, কাচি- সবই আঁকা হয়। পৌষপার্বণ হয় পৌষ মাসের সংক্রান্তির দিন। পরদিন বাউনি অর্থাৎ যাত্রাল²ীর পুজো। এইদিন উঠোনের মাঝখানে চাষের যাবতীয় সরঞ্জাম জড়ো করে রেখে তার চারধারে আলপনা দেওয়া হয় ও পুজো করা হয়। এই আলপনাটি নদিয়া জেলার আনন্দনগর থেকে সংগৃহীত ।
লেখক :
বিধান বিশ^াস, লোক গবেষক।
বি.দ্র. : লেখাটি ইতোপূর্বে ভারতের পশ্চিম বাংলায় লীনা চাকী সম্পাদিত ‘বাংলার ধান ও ধান সংস্কৃতি’ ও হৃদয় পত্রিকাসহ ‘প্রবাহ’তে নানা আকারে ছাপা হয়েছে। লেখাটি এখন প্রকাশ পেলো বর্ধিতাকারে।