প্রাচীন রাব্বাদের ব্যাখ্যা অনুসারে অ্যাডামের প্রথম স্ত্রী ইভ নয়, অন্য কেউ! উপকথা অনুসারে তার নাম লিলিথ। লিলিথ এক রহস্যময় মানবী তার পাখা ছিল । সে ও অ্যাডাম একই মাটি থেকে সৃষ্টি হয়েছিল বিধায় যৌন মিলনে লিলিথ চেয়েছিল সম-অধিকার। আর সেই বিবাদের কারণেই স্বর্গ ত্যাগ করে লিলিথ। স্বর্গ থেকে বিতাড়িত লিলিথ এখন একা, অতৃপ্ত। রাতের আঁধারে অবিবাহিত ঘুমন্ত ছেলেদের সাথে মিলিত হয়ে যাচ্ছে লিলিথ, শতাব্দীর পর শতাব্দী। অতৃপ্ত লিলিথ নিজের যৌন ক্ষুধা মিটিয়ে যাচ্ছে এভাবেই।
লিলিথ উপাখ্যানের উৎপত্তি হয়েছিল যিশু খ্রিস্টের জন্মের তিন হাজার বছর আগে। প্রাচীন সুমেরীয় রূপকথায়, তাকে বলা হত ‘অন্ধকারের নারী’ বা ডাইনী। লিলিথের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর একটি খোদাই করা সিরীয় লিপিতে, যেখানে লেখা ছিল, ‘হে অন্ধকারের উড়ন্ত অশুভ আত্মা, দূর হয়ে যা এই মুহূর্তে, হে লিলিথ!’ লিলিথ নামটি একই সাথে বিতর্ক, রহস্যময়তা, আধিপত্যের ইতিহাস, শোষক ও শোষিত শ্রেণির আদিরূপে মিলেমিশে রয়েছে।
এক অর্থে লিলিথই আমাদের আদি-মাতা। যদিও আধিপত্যবাদের করাল হস্তপেক্ষে চিরকালের জন্য সেই ইতিহাস আজ লুপ্তপ্রায়। লিলিথ শব্দের প্রচলিত অর্থ রাত্রি।
লিলিথের অস্তিত্ব নিয়ে চালু রয়েছে একাধিক উপাখ্যান-
ধর্মগ্রন্থ অনুসারে বলা যায়, ইসলাম ও খ্রিস্ট ধর্মে যদিও আদম-হাওয়া কিংবা এডাম-ঈভের কথা বলা হয়েছে কিন্তু এই দুটি ধর্মেরই আদিরূপ হল ইহুদী ধর্ম। সেই ইহুদী ধর্মের ধর্মগ্রন্থ ‘বুক অব জেনেসিসে’ বলা হচ্ছে প্রথম মানবী ইভেরও আগে আরেক নারীর অস্তিত্বের কথা যিনি আদমের মতোই মাটির তৈরি। আদমের পাঁজরের হাড় থেকে প্রস্তুত নয়। নর ও নারীকে একই সাথে সৃষ্টি করার কথা উল্লেখ আছে ইহুদি ধর্মগ্রন্থে।
লিলিথ চরিত্রটি উপাখ্যানে পরিণত হওয়ার পেছনে মূলত যে ঘটনাটি প্রচলিত সেটি পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যবাদী মানসিকতার প্রাথমিক নিদর্শন। বলা হচ্ছে, আদম ও লিলিথের মধ্যে দ্বন্ধের শুরু সঙ্গমের মধ্য দিয়ে। নর-নারীর সম্পর্কের সর্বোৎকৃষ্ট রূপ ভালোবাসা আর সেই ভালোবাসার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশের মধ্য দিয়ে প্রজন্মের উত্তরাধিকার সৃষ্টির পথ তৈরি হয়। কিন্তু নর ও নারীর ভালোবাসাবাসির মধুরতম পর্যায়েও পৃথিবীর প্রথম পুরুষ এগিয়ে থাকতে চান নারীর চাইতে। তিনি সর্বদাই আরোহনে ইচ্ছুক এবং এজন্য তিনি বল প্রয়োগেও পিছ-পা হন না। সৃষ্টির শুরুতেই কেন তার এমন ধারণা হল যে, তিনিই ঝঁনলবপঃ, নারী ঙনলবপঃরাব অথবা তিনি অপঃরাব, নারী চধংংরাব, তা বলা মুশকিল। লিলিথের যুক্তি হল তারা দুজনই যেহেতু একই মৃত্তিকাজাত সৃষ্টি কাজেই আদমের আধিপত্য তিনি মেনে নিতে পারেন না। ফলস্বরূপ লিলিথকে পেতে হয়েছে অবাধ্যতার জন্য বহুমুখী শাস্তি। অনন্তকালের জন্য। সম্ভবত একারণেই পরবর্তী সময়ে ধর্মে নারীর শয্যাগমনের বিষয়টি তিরস্কারের মাধ্যমে প্রায় আইনীরূপ দেয়া হয়েছে। যেমন-
১. যখন কোন স্ত্রীকে তার স্বামী শয্যায় আহ্বান করে এবং সে তা অস্বীকার করে এবং তার জন্য যদি স্বামীটি অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত কাটায়- তাহলে সেই স্ত্রীকে ফেরেশতাগণ যেন প্রভাত পর্যন্ত অভিশাপ দেয়। (তিরমিজি হাদিস)
২. …স্ত্রীগণের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর, তাদের সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদের প্রহার কর। (সুরা নিসা : ৩৪ আয়াত)
সৃষ্টির শুরুতেই নারীর ভাগ্যে রচিত হয়েছে অপবাদের ইতিবৃত্ত, ঘৃণা আর কলঙ্ক দিয়ে। তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে সন্তান ও সম্পদের অধিকার থেকে। জন্মের আদি থেকে নারীই ¯্রষ্টা। তবুও তাকে শিশু পালনের জন্য প্রয়োজনীয় মাতৃত্বের বোধ ছাড়া অধিক কোনো অধিকার প্রদান করা হয়নি।
যদি ভাবা হয়, লিলিথ কেন মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল তার নিয়তি, তাহলে পূর্বপাঠে দেখা যাবে লিলিথ সর্বদাই নিঃসঙ্গ। আদমকে শুরু থেকেই এড়ফ বা ¯্রষ্টা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি এড়ফ-এর আজ্ঞাবহ অনুচর বা ফেরেশতাগণও লিলিথের অবাধ্যতায় তাকে হত্যার হুমকি দেয়। লিলিথ কি তবে বিদ্রোহ করেছিল স্বয়ং ¯্রষ্টার বিরুদ্ধেও? সব তথ্যাদি মিলিয়ে একথা ভাবা বোধ হয় অসঙ্গত নয় যে, লিলিথ কেবলই সৃষ্টির প্রথম নারী নন। তিনিই প্রথম সৃষ্টি। কেননা, নারীই তো সৃষ্টির আধার। ¯্রষ্টার অনুরূপ পার্থিব সংস্করণ। নরই বরং সৃষ্টির সহায়করূপে আর্বিভূত হয়েছে। অথচ সৃষ্টিকর্তার প্রতিরূপকে পরবর্তী সময়ে এতখানি অবনমিত করা হল যে, নারীর কাছে পুরুষকে স্রষ্টার সমতুল্যই করে ফেলা হল প্রায় (আমি যদি সেজদা করিতে হুকুম করিতাম তবে নিশ্চয়ই সকল নারীকে হুকুম করিতাম তাহারা যেন তাহাদের স্বামীকে সেজদা করে)- আবু দাউদ
আজকের বিশ্বে সমাজতাত্ত্বিক বা মনস্তত্ত্ববিদেরা জেন্ডার বৈষম্যের জন্য প্রধানত দায়ী করছেন পুরুষসৃষ্ট সমাজ পারিপার্শ্বকে। অথচ সৃষ্টির আদিতে যখন ধর্ম-সমাজ বা রাষ্ট্রের প্রতিবন্ধকতার সীমানা প্রাচীরগুলো সৃষ্টি হয়নি তখনই তো জেন্ডার বৈষম্য বা আধিপত্যবাদের রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। ঘৃণা-অবজ্ঞা-অপবাদ-বিতাড়নের চক্রে শৃঙ্খলাবদ্ধ নারী চিরকাল। তাই সৃষ্টির আদিতে যৌনজীবন যাপনে আনুগত্যের কোনোরকম শর্তস্থাপন ছাড়াই, বিবাহবন্ধন নামক উদ্বন্ধন রজ্জু আবিষ্কৃত হবার আগেই, অবাধ্যতার ফলস্বরূপ লিলিথের ভাগ্যে জুটেছিল পুরুষ-ধরা কামুক নারীর অপবাদ। শিশু হত্যা ও ভক্ষণকারী এবং কামুক-নারীর জন্য এই দুই অপবাদই যথেষ্ট তার ভাবমূর্তি ধুলোয় মিশিয়ে দেবার জন্য। লিলিথের ঘটনার সঙ্গে যদিও ইসলাম ধর্মে উল্লেখিত শয়তান বা ইবলিশের ঘটনার সাযুজ্য পাওয়া যায় তবু সেখানেও বৈষম্যের দেখা মেলে খুব সহজেই। শয়তান ছিল আগুনের সৃষ্টি। কাজেই মানুষের সাথে সৃষ্টির শুরুতেই বিষয়টি ছিল অসম লড়াই। তাছাড়া শয়তান যখন মানুষকে সেজদা করতে অস্বীকৃতি জানায় তখন শয়তানকে অবাধ্যতার শাস্তিস্বরূপ তাকে অভিশপ্ত আত্মারূপে ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তুু লিলিথের মতো সে কি বয়ে বেড়িয়েছে চিরস্থায়ী অপবাদ? তাকে তো বরং মানুষকে বিপথগামী করবার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এখানেও শয়তান নররূপে আবির্ভূত বলেই ¯্রষ্টার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে মানব সমাজে পরিপূর্ণভাবে তার ক্ষমতা কায়েমে নিয়োজিত।
বিপরীতে লিলিথ নিজেকে শ্রেষ্ঠ নয়, কেবল সমতার দাবিতেই ধিকৃত, অভিযুক্ত, বিতাড়িত হতে হতে খোদ ধর্ম গ্রন্থের ইতিহাস থেকেই ক্রমে বিলুপ্ত; যদিও তথ্য উপাত্ত বলে লিলিথই আসলে নারীর পূর্বসূরী, আদি-মাতা। আর নারীর জন্য ডাইনী আখ্যায়িত হওয়াটা রীতিমত ঐতিহাসিক ব্যাপার। মজার বিষয় হল, ‘ডাইনি’ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘উইচ’ (ডরঃপয) এসেছে গ্রীক ‘উইক্কা’ থেকে যার অর্থ বুদ্ধিমান নারী। এইসব বুদ্ধিমান নারীদের বিদ্যাবুদ্ধির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এক জোট হয়ে পুরুষতন্ত্রের ধারকেরা একের পর এক ফাঁসি দিয়েছে তাদের।
যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে বিভিন্ন পর্যায়ে ডাইনীদের বিভিন্ন উপকথা জানা যায়। একটা সময় ছিল যখন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ডাইনিদের বেশ রমরমা অবস্থা ছিল। সাধারণ মানুষের মাঝেও ডাইনিদের প্রতি এক ধরনের বিশ্বাস কাজ করত। বিশেষত রোগ মুক্তি ও জাদু টোনার কাজে তৎকালীন মানুষ ডাইনিদের শরণাপন্ন হত। কিন্তু মধ্যযুগ পরবর্তী সময়ে গোটা যুক্তরাজ্য থেকেই ধীরে ধীরে ডাইনিদের নিষিদ্ধ করা শুরু হয়। আর এই নিষিদ্ধের খেসারত দিতে হয়েছে কয়েক হাজার ডাইনিকে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। ফাঁসি, আগুনে পুড়িয়ে কিংবা অন্যান্য মধ্যযুগীয় বর্বর কায়দায় অনেক নারীকেই হত্যা করা হয়। ডাইনি বিদ্যার জন্য। এমনো হয়েছে, অনেক সাধারণ নারীকেও সে সময় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। কোনো কিছু যাচাই না করেই। নারীর শৃঙ্খলিত হবার ইতিহাস তো আজকের নয়। কয়েক হাজার বছরের।
লিলিথের গল্পের পরের অংশে দেখা যায় এডামের মনোবাঞ্ছা পরিপূর্ণ না হওয়াতে সে লিলিথের উপর বলপ্রয়োগ করে। লিলিথ শুরু থেকেই আত্মসচেতন, এটা প্রতিভাত। এডামের কর্তৃত্ব অস্বীকৃতি জানিয়ে লিলিথ আদমকে ছেড়ে পৃথিবীতে চলে আসে। আদম ইশ্বরের কাছে অভিযোগ জানালে লিলিথের কাছে ফেরেশতারা ঈশ্বরের বাণী বহন করে নিয়ে আসে। লিলিথ তখন এক অদ্ভুত কথা বলে যা এই একুশ শতকের অধিকার সচেতন নারীর ভাষ্য বলেই প্রতীয়মান হয়। লিলিথ বলে, আমি জানি, ঈশ্বর আমাকে কেবলি শিশুর প্রতি দুর্বল করবার জন্য সৃষ্টি করেছেন। তাও শুধু শিশুপুত্রের জন্য আটদিন আর কন্যা শিশুর ক্ষেত্রে বারোদিন পর্যন্ত আমার অধিকার বলবৎযোগ্য।
কী বিস্ময়! আজকের আধুনিকতম আদালতেও সাধারণ বিবেচনায় মাকে খুব সহজে সন্তানের কাস্টডি বা হেফাজত দেয়া হয় না। অথচ মাতৃত্বের জয়গানে মুখর জনসমাজ তথা পুরো বিশ্ব। লিলিথ ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে হুমকি দেয়া হয় প্রতিদিন তার একশত সন্তানকে মেরে ফেলার। মনের দুর্বলতাকে ব্ল্যাকমেইল করার অপপ্রয়াস ব্যর্থ হয়। লিলিথ জয় করে নেয় সকল প্রকার দুর্বলতা বা নতি স্বীকারকে। কোনো কিছুর বিনিময়েই সে স্বাধীনতাকে বিসর্জন দেয়নি। যদিও বলছি লিলিথই আমাদের আদিমাতা। কিন্তু বিদ্রোহের এই প্রেক্ষাপটকে মাথায় রাখলে আজ পর্যন্ত কি লিলিথের প্রকৃত উত্তরসূরীর দেখা মিলেছে?
আর তাইতো শুরু হয়ে যায় অপবাদ আর অপপ্রচারের বন্যা। লিলিথ কামুক, লিলিথ শিশু ভক্ষণকারী ডাইনি। সে এক অশুভ আত্মার অধিকারী, রাতজাগা প্যাঁচার রূপে সে ঘুরে বেড়ায়। ব্যাবিলনীয় তালমুদে (শাবাত ৫) এ বলা আছে, কোনো যুবক পুরুষের জন্য রাতের বেলায় ঘরে একা একা ঘুমানো নিষিদ্ধ, কারণ লিলিথ তাকে ছলে বলে গ্রাস করবে। বলা হত, লিলিথ নাকি একলা পুরুষের বীর্যে নিজেকে গর্ভবতী করে আরো শয়তানের জন্ম দেবে।
এ ধরনের কল্পকাহিনীর পর এলো একটু যুক্তিসঙ্গতভাবে লিলিথের গল্পকে ব্যাখ্যার চেষ্টা। ইহুদীদের ‘দ্যা বুক অব জেনেসিসে’ বর্ণিত অনেক জটিলতাকে সাধারণ মানুষের বোধগম্য করার চেষ্টা দেখা যায় মিদ্রাশ সাহিত্য। জেনেসিসের মিদ্রাশ সংস্করণে (জেনেসিস রাব্বাহ) লিলিথকে রূপ দেয়া হয়েছিল অশুভ আত্মা থেকে একটা গ্রহণযোগ্য চরিত্রে। এখানে দাবি করা হয়, ইভেরও আগে আদমের প্রথম স্ত্রী ছিল লিলিথ। জেনেসিসে বর্ণিত দুইটি সৃষ্টিতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এই ব্যাখ্যা দেয়া হয়। জেনেসিস : ১-এ বলা আছে নারী এবং পুরুষ উভয়ই একই সময়ে তৈরি, কিন্তু জেনেসিস : ২-এ বলা আছে, ইভের আগে তৈরি হয় আদম। জেনেসিসের মিদ্রাশ সংস্করণে বলা হয়, আদি সৃষ্টির এই দুই গল্প আসলে ভিন্ন। প্রথম গল্পে আদমের স্ত্রীকে একই সময়ে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় সমানভাবে। কিন্তু কোনো একটা কারণে তাদের সেই বিয়ে টেকেনি। কাজেই সৃষ্টিকর্তা আদমের জন্য আবার তৈরি করলেন দ্বিতীয় স্ত্রী ইভকে।
অর্থাৎ সৃষ্টির শুরুতেই পুরুষের তথাকথিত ‘সহজাত’ বহুগামিতা ও বহুবিবাহ অনুমোদিত।
আধুনিক সময়ে লিলিথ নারী স্বাধীনতার শক্তিশালি প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্রুুকলিনে জন্মগ্রহণকারী ম্যানহাটান কলেজের তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক জুডিথ প্লাস্কোর (১৯৪৭) ধর্মতত্ত্বের নারীবাদী ব্যাখ্যা ও দর্শন বিশেষত ঞযব পড়সসরহম ড়ভ ষরষষরঃয গ্রন্থের সারসংক্ষেপ লিলিথ সম্পর্কে নতুন করে ভাববার অবকাশ দেয়। এখানে জুডিথ লিলিথকে দেখিয়েছেন ইভের গোপন সঙ্গী হিসেবে। যার বুদ্ধিতেই ইভ নিষেধাজ্ঞার প্রাচীর ডিঙিয়ে জ্ঞানফল আহরণে প্রবৃত্ত হয়। ইভকে প্ররোচনা দানকারী সাপটি আসলে ছদ্মবেশি লিলিথ। দুর্মূখেরা অবশ্য তাদের এই গোপন সম্পর্ককে ষবংনরধহরংস-এর প্রারম্ভ বলতে পিছপা হন না। কিন্তু যত যাই হোক না কেন, এ ব্যাপারে দ্বিধার অবকাশ নেই যে, জ্ঞানফল আহরণকারী ব্যক্তিটি নারীই বটে। নামই যখন জ্ঞানফল, কেন তা নিন্দার্থে- তা বোধগম্য নয়। পৃথিবীর হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, সাফল্য-সংগ্রামের জীবনের চাইতে স্বর্গের ইন্দ্রিয় নির্ভর অলস জীবন যাপনই পুরুষের কাম্য হয়তো। বেগম রোকেয়া বিষয়টিকে মাথায় রেখে পুরুষতন্ত্রকে শরবিদ্ধ করেছেন এভাবে-
‘রমণী প্রতিভার আদি অধিশ্বরী। ইহা সর্ব্ববাদিসম্মত যে নারীই প্রথমে জ্ঞানফল চয়ন ও ভক্ষণ করিয়াছেন। পরে পুরুষ তাঁহার (উচ্ছিষ্ট!)প্রদত্ত ফলপ্রাপ্ত হইয়াছেন।’(রোকেয়া রচনাবলী/ পৃ:২০৬)
বর্তমান পৃথিবীর দিকে তাকালে লিলিথের অশুভত্বের অপবাদ-আবিষ্ট নির্বাসিত জীবনের প্রতিফলন দেখতে পাই বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতাকামী নারীদের ভেতর। লিলিথের মতো আত্মমর্যদাকামী নারীদের একইভাবে সমাজ-বিচ্ছিন্ন করে ফেলার অপপ্রয়াস অব্যাহতভাবে বিদ্যমান। আজো শত-সহ¯্র বছর পরেও দেশে-দেশে নারী তার আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ব্যাপৃত। আজো সন্তান ও সম্পদের অধিকারের মতো মৌলিক বিষয়গুলোতে সাম্য প্রতিষ্ঠা পায়নি। সবচেয়ে বড় কথা, নারীর সম্মান অথবা অসম্মান এখনো তার কর্মপরিসর বা ব্যক্তিত্বের প্রভাব সঞ্চারণের উপর নির্ভর করে না। আজো সমাজ-পরিপার্শ্বের ক্ষুদ্র গন্ডিতে তুচ্ছাতিতুচ্ছ প্রপঞ্চে ঘুরপাক খাচ্ছে নারীর অবয়ব। স্বেচ্ছা নির্বাসিত মোহমুক্ত লিলিথের আত্মমর্যাদাবোধ তাই আজকের দ্বিধা বিভক্ত, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যহীন নারীবাদী ভাবনার যোগ্য আদর্শিক প্রতিমুর্তি হয়ে উঠতে পারে। তাই ‘লিলিথ’ বিষয়টিতে আরও অধিক গবেষণা, যথার্থ অনুসন্ধান ও পুনঃপাঠ হওয়া জরুরী।

(সংকলিত)

Leave a comment