সম্পাদকের কথা

কভিড-১৯ নানা গঠনে আজও রয়েছে পৃথিবীর বুকে। গত দুই বছরে তার দাপটে আমরা হারিয়েছি অনেক কিছু। মনে হয়েছিলো- এযাত্রা বেঁচে গেলে আমরা মানবকুল অতি-মানবীয় হয়ে উঠবো, থাকবে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, থাকবেনা কোনো বিভেদ বিরোধ। অথচো…অতিমারিকালেও আমরা হয়েছি হিং¯্র, ভেদ-বিরোধ করেছি ও করে চলেছি ধর্মের-বর্ণের-মতের সাথে, জানমাল ধ¦ংস করছি দেশে দেশে।
২০২২ ক্রিস্টাব্দে উদযাপন হয়েছে বাংলাদেশের স¦াধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী। মুক্তির লড়াইয়ের যে চেতনা ছিলো আমাদের তা ক্রমান্বয়ে কাগুজে হয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবনে। তাই আমাদের কাঙ্খিত সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে তুলতে লোকসং¯কৃতির বিকল্প নাই। অহিংস ও অসাম্প্রদায়িকতার আধার লোকসংস্কৃতির অবাধ চর্চার মধ্যদিয়েই তৈরী হতে পারে একটি জাতিসত্বার মূল পরিচয়। আর সে সংস্কৃতির জানান দিতে, আমাদের চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার নাম ত্রৈমাসিক লোকসংস্কৃতি পত্রিকা। দীর্ঘদিনের স্বপ্নচারণের মধ্যদিয়ে আমরা লোকসংস্কৃতির জগতে ত্রৈমাসিক লোকসংস্কৃতি পত্রিকা’র প্রারম্ভিক সংখ্যা প্রকাশ করেছি, যা আজ অন্তর্জালে পত্রিকা পাঠের পাশাপাশি পাঠক পত্রিকাটি মুদ্রিত আকারেও সংগ্রহ করতে পারছেন।
সম্প্রতি আমরা আমাদের অনেক লোকোজনসহ অনেককে হারিয়েছি। কোভিড-১৯ ও নানা শারীরিক কারণে প্রয়াত সকলের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই, যাঁরা জীবনভর নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন লোকসংস্কৃতির জন্য। কভিড-১৯ অতিমারির কারণে গত দুই বছরে লোকসংস্কৃতির সাথে যুক্ত সকলের যে সমস্ত মানসিক ও অর্থিক ক্ষতি হয়েছে, আশাকরি তা আবার পুষিয়ে নেবার চেষ্টায় সকলের কাজে আসবে নবজোয়ার। এ সময়ে লোকোদের কল্যাণ (ডবষভবধৎ) অর্থাৎ দান-সদগা না করে তাদের সার্বিক উন্নয়ন ও প্রসারে মানসগত, পরিবেশনাগত ও বস্তুগত লোকসংস্কৃতির ব্যবহার ও অনুষ্ঠানাদি বাড়াতে সরকারের যথাযথ মন্ত্রণালয়সহ সকল স্তরে কর্মসূচি ও তার সঠিক বাস্তবায়ন থাকা প্রয়োজন ।
বাংলার প্রাতিষ্ঠানিক লোকসংস্কৃতি চর্চার উদয়কাল থেকে লোকজীবনের নানা দিক উন্মোচিত হয়েছে এ সংখ্যায়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের নবীন – প্রবীন গবেষক লেখকদের নানা বর্ণিল লেখায় সমৃদ্ধ হয়েছে এ সংখ্যার অঙ্গশৈষ্ঠব। পাঠক, লেখক ও শুভানুধ্যায়িদের সহযোগিতা নিয়ে পত্রিকাটি প্রতি তিনমাস অন্তর প্রকাশ করার নিরন্তর চেষ্টা থাকবে আমাদের। তবে প্রারম্ভিক সংখ্যা প্রকাশে অনিচ্ছাকৃত বিলম্ব হওয়ায় ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি পাঠক, লেখক ও শুভানুধ্যায়ি সকলের কাছে। সকলের জন্য বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ শুভবার্তা বয়ে আনুক।